বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ভালবাসার এক নাম নেইমার। তিনি একজন ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার, যিনি ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন এবং ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। আজ আপনাদের জানাব ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নেইমার এর বায়োগ্রাফী।
নেইমারের সম্পূর্ণ নাম "নেইমার দ্যা সিলভা সানতোস জুনিয়র"। ১৯৯২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী ব্রাজিলের সাওপাওলোর মোগি ডাস ক্রুজ শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম সিনিয়র নেইমার ডা সিলভা এবং মায়ের নাম নান্দিনি সানতোস। নেইমার জুনিয়র, তার পিতার নামানুসারে নাম পান। তার পিতা একজন প্রাক্তন ফুটবলার এবং পরবর্তীতে নেইমারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। নেইমার তার প্রতিভা দেখানো শুরু করার পর থেকেই তার পিতা নেইমারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। পরিবারে, রাফায়েলা নামে নেইমারের একজন বোন রয়েছে।
ফুটবলে নেইমাররের স্বপ্নপূরণের পথে প্রথম সাফল্য আসে মাত্র ১১ বছর বয়সে, যখন ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব সান্তোসের যুবদলে খেলার সুযোগ পান তিনি। ২০০৯ সালে মাত্র সতের বছর বয়সে পেশাদারী ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটে তার। সে বছরই সেরা খেলোয়াড় হিসেবে এওয়ার্ড জিতেন তিনি। ২০১০ সালে ধূমকেতুর মতো উত্থান ঘটে নেইমারের। সান্তোসকে লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ, কোপা দো ব্রাজিল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো ছাড়াও টানা চারবার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তিনি। ২০১১ সালে সান্তোসকে ৪৮ বছরের ভেতর প্রথমবারের মতো কোপা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানোর পথে নেইমার এমন একটি অসাধারণ গোল করেন, যেটি ফিফা ঐ বছরের বর্ষসেরা গোল হিসেবে মনোনীত করে! এছাড়াও সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে শুধু ব্রাজিলের নয়, গোটা দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ফুটবলার হিসেবেও এওয়ার্ড জিতে নেন নেইমার। মাত্র ১৪ বছর বয়সে নেইমার, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বেশ মোটা অঙ্কের বেতনের প্রস্তাব পান। কিন্তু সান্তোস তাদের এই অসামান্য প্রতিভাধর খেলোয়াড়টিকে হাতছাড়া করতে রাজি ছিল না। তাই তারা রিয়াল মাদ্রিদের চেয়েও বেশি বেতন দিয়ে নেইমারকে রেখে দেয় নিজেদের কাছে! এই বিশ্বাসের প্রতিদানে নেইমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য উপহার দিয়েছেন সান্তোসকে।
পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে নেইমার পাড়ি জমালেন বার্সেলোনায়। সেখানে তখন রাজত্ব করছেন মেসি, সুয়ারেজের মতো কিংবদন্তী খেলোয়াড়। তাদের সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমানে সমান দক্ষতা প্রমাণ করে গেলেন, বয়সে নবীন নেইমার। তিনজন মিলে বার্সেলোনাকে জেতালেন অনেক অনেক ট্রফি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে অসাধারণ নৈপুণ্যে ৩৯ গোল করে বার্সেলোনাকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ট্রেবল জেতাতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি বার্সেলোনা ছেড়ে "প্যারিস সেন্ট জার্মেই" তে যোগ দেন "২২২ মিলিয়ন ইউরোর" বিনিময়ে। এবং রেকর্ড গড়েন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবলার হিসেবে।
বার্সেলোনায় থাকাকালীন নেইমার ২ বার লা লিগা, ৩ বার কোপা দেল রে, ১ বার স্পেনীয় সুপার কাপ, ১ বার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, ১ বার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ অর্জন করেন। শুধু ক্লাবেই নয়, ব্রাজিলের জাতীয় দলেও তিনি দারুণ সফল খেলোয়াড়। এছাড়া ১ বার ফিফা কনফেডারেশন কাপের গোল্ডেন বল, ১ বার দক্ষিণ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ১ বার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ব্রোঞ্জ বল, ২ বার বর্ষসেরা দক্ষিণ আমেরিকার খেলোয়াড়, ১ বার ফিফা পুস্কাস পুরস্কার সহ অসংখ্য ব্যক্তিগত অর্জন রয়েছে নেইমারের ক্যারিয়ারে।
২০১০ বিশ্বকাপেই তার খেলার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন ব্রাজিলিয়ান কোচ দুঙ্গা তাকে দলে রাখেননি। পেলে, রোনালদো থেকে শুরু করে সবাই কোচকে অনুরোধ করেন। হাজার হাজার ভক্ত পিটিশন করে নেইমারকে দলে নিতে। কিন্তু দুঙ্গা দলে নিলেন না নেইমারকে, বললেন নেইমার এখনও অপরিণত। সেই অবহেলিত নেইমার এখন পেলে এবং রোনালদোর পরই ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। যেভাবে খেলে যাচ্ছেন, এক নম্বর আসনটিও দখল করে নিতে পারেন ভবিষ্যতে!
ব্যক্তিগত জীবনে নেইমার ২০১১ সালের আগস্টে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সন্তানের পিতা হন। তার সন্তানের মায়ের নাম "ক্যারোলিনা দান্তাস", কিন্তু মজার ব্যাপার হল নেইমারের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও, নেইমার কিছু সময়ের জন্য ব্রাজিলিয়ান মডেল "ব্রুনা মারকুইজিন' এর সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু আজও তারা ভাল বন্ধু হিসেবে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। নেইমার একজন খ্রিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসীএবং রিকার্ডো কাকাকে তিনি ধর্মীয় গুরু মানেন। আর নিজের বেতনের ১০ শতাংশ চার্চেও দান করেন নেইমার।
খুব অল্প বয়সেই অনেক যশ-খ্যাতি কামিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই স্টাইলিশ ফুটবল সুপারস্টার এবং গোটা ফুটবল বিশ্বকে এখনো অনেক চমক দেখানোর জন্য মুখিয়ে আছেন নেইমার জুনিয়র।
To enjoy all exclusive contents of Mobishop WAP portal, please connect your mobile data and visit http://mobishop.com.bd/ or sms START MS to 24747 from your Grameenphone/Robi/Banglalink/Airtel number. Thanks!
Social Share