আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ !!
সুপ্রীয় ভাই ও বোনেরা, আশা করি আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী ও দয়ার বরকতে সবাই ভালো আছেন।
বদরের যুদ্ধের সময় সাহাবা আজমাইন সকল, আমাদের প্রিয় নবীজীর অনেক মু’জিজার সাক্ষী হয়েছেন। যা আমরা অনেকেই জানিনা। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বদরের যুদ্ধের সময় যেসকল মু’জিজা দেখিয়েছিলেন, তার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি, আজকে আপনাদের জানাবো।
বদরের যুদ্ধের শুরুতে, মহানবী (সাঃ) কুরাইশ বাহিনীর দিকে মুখ করে বললেন, ‘শাহাতিল উজুহ’ অর্থাৎ “ওদের চেহারা বিগড়ে যাক”। একথা বলেই তিনি কাফির সৈনিকদের প্রতি ধুলোবালি নিক্ষেপ করেন। এ বালি কাফিরদের নাকে মুখে ও চোখে পড়ে। এমনকি ধুলোর কণা ওদের গলায় ডুকে পড়ে। ধুলোর আক্রমণ থেকে কাফির দলের কেউ বাদ যায়নি। তাই আল্লাহপাক বলেন- ‘এবং তখন তুমি নিক্ষেপ করোনি বরং আল্লাহ তা’য়ালাই নিক্ষেপ করেছিলেন’। (সূরা: আনফাল, আয়াত: ১৭)।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে হযরত ওক্কাশা ইবনে মেহসান আসাদী (রাঃ)- এর তলোয়ার ভেঙে যায়। ওক্কাশা (রাঃ), নবী করীম (সাঃ) -এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি তাকে এক টুকরো শুকনো খেজুরের ডাল দিয়ে বললেন, ওক্কাশা এটি দিয়ে লড়াই কর। ওক্কাশা (রাঃ) সে ডাল হাতে নিয়ে হেলাতেই তা একটি ধারালো চকচকে তলোয়ারে পরিণত হয়। এরপর তিনি সে তলোয়ার দিয়ে লড়াই করতে লাগলেন। সে তলোয়ারের নাম হয় ‘আওন’ অর্থাৎ "সাহায্য"। যুদ্ধের পরে তলোয়ারটি ওক্কাশার কাছেই ছিল।
এ যুদ্ধে হযরত মুয়ায বিন আমর (রাঃ) - এর একটি হাত আবু জাহেলের পুত্র “ইকরামার” তরবারীর আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তিনি হাতের খণ্ডিত অংশসহ নবী করীম (সাঃ)- এর খেদমতে উপস্থিত হলেন। হুজুর পাক (সাঃ) একটু থু থু মুবারক লাগিয়ে খণ্ডিত অংশ সংযুক্ত করে দিলেন। সাথে সাথে হাত জোড়া লেগে গেল। হযরত মুয়ায (রাঃ) উক্ত হাত নিয়ে সুস্থ অবস্থায় হযরত উসমান (রাঃ) এর খেলাফতকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত একটি হাদিসে উল্লেখ, সাহাবীগণের সামনে কুরাইশের সাকীগণও উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবূ সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তখন সে বলতে লাগলো, আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে আবূ জাহেল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবনু খালফ, তাদের সম্বন্ধে বলতে পারি যে, তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যখন সে এরুপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যা, আমি আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পূনরায় আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে আবূ জাহেল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবনু খালফ সম্বন্ধে বলতে পারি। যখন সে পূনরায় এ একই কথা বলল, তখন তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন।
সে সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন তিনি এ অবস্থা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেনঃ সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে মারতে থাক আর যখন সে মিথ্যা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও।” [মুসলিম: ৪৪৭০]
এ হাদিসের ব্যাখ্যাকারগণ বলেন, এ বালক সত্য কথাই বলছিল। কিন্তু সাহাবাদের ধারণা ছিল না যে আবু জাহেল এক বিশাল বাহিনী নিয়ে তাঁদের আক্রমণ করতে আসছে। ফলে সে বালকের কথা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু নবী (সাঃ) ঠিকই জানতে পারলেন যে ওই বালকের কথাই সত্যি, কেননা ইতােমধ্যেই আবু জাহেল মুসলমানদের আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে।
আরেকটি হাদিসে, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “তিনি বলেন, আমরা হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এর সাথে মক্কা ও মদিনা শরিফের মধ্যখানে ছিলাম। অতঃপর তিনি বদরবাসী সম্পর্কে বর্ননা করতে গিয়ে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেরদিন নিহত কাফিরদের মৃত্যুর স্থানগুলি দেখিয়ে দিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইনশাআল্লাহ এটি আগামীকাল অমুকের নিহতের স্থান হবে এবং এটি অমুকের নিহতের স্থান হবে। হযরত উমর (রাঃ) বলেন, ঐ সত্তার কসম যিনি তাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, যে কাফির সম্পর্কে যে সীমারেখা তিনি নির্দিষ্ট করেছেন, তাদের মৃত্যু সে সীমারেখা থেকে তিল পরিমানও আগে-পিছে হয়নি।” [মুসলিমঃ ২৮৭৩ এবং ৪৪৭০]
আল্লাহ তাঁ'য়ালা আমাদের সবাইকে ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধের তাৎপর্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমল করার তৌফিক দান করুণ! আমীন!
Social Share